মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৪৯ অপরাহ্ন
বশির আল মামুন, চট্টগ্রাম:
বঙ্গোপসাগর উপকুলের সন্ধীপ, কুতুবদিয়া, মহেষখালী ও সোনাদিয়া চ্যানেলের জেলেদের মাছ ধরা ট্রলারে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে জলদস্যুদের অপতৎপরতা। ইলিশ ধরার মৌসুমে জলদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠায় বোট মালিক ও জেলে পরিবারে আতঙ্ক বিরাজ করছে।দুই মাসের নিষেদাজ্ঞা শেষে সাগরে গিয়ে জেলেরা এখন জলদস্যুদের কবলে পড়েছেন। জলদস্যুরা অর্তকিত হামলা চালিয়ে জেলেদের জিম্মি করে বোট সহ মাছ নিয়ে যাচ্ছে অজ্ঞাত স্থানে। সেখান থেকে মালেকদের খবর দিয়ে টাকা আদায় করছে। জানাগেছে বঙ্গোপসাগরের এসব চ্যানেলে জলদস্যুরা জেলেদের জিম্মি করে প্রতি বোট থেকে ২/৩ লাখ টাকা করে আদায় করছে। জেলেদের জীবন বাঁচাতে ও বোট ফিরে পেতে মালিকরা নগদ টাকা অতবা মোবাইলে ব্যাংককিং চ্যানেলে ডাকাতদের অর্থ পাঠাচ্ছেন। জেলেরা প্রতিনিয়ত ডাকাতদের হাতে নির্যাতনের শিকার হলেও ভয়ে মালিকরা আইনশৃংখলা বাহিনির কাছে ডাকাতির অভিযোগ করছেন না।
জেলেরা জানান গত ৩১ আগস্ট রাতে বঙ্গোপসাগরের গুলিরধার নামক স্থানে মাছ ধরারত অবস্থায় এফ.বি মামুনসহ পাঁচ ফিশিং ট্রলার গণডাকাতি শিকার হয়েছে । এ সময় জলদস্যুদের মারধর সহ্য করতে না পেরে এসব ট্রলারের পাঁচ জেলে সাগরে ঝাঁপ দেয়। এদের মধ্যে দুই জেলে উপক‚লে ফিরে এসেছে। এখনো অন্যরা ফিরে আসেনি। ডাকাতির কবলে পড়া মাঝি ফারুক জানান, গত শনিবার দুপুরে কুতুবদিয়ার উত্তর বড়ঘোপ উপক‚ল থেকে মাছ ধরার উদ্দ্যেশে সাগরে যায়। সোমবার (৩১ আগস্ট) রাতে সাগরের গুলিরধার নামক স্থানে মাছ ধরারত অবস্থায় অস্ত্রধারী ১৪/১৫জনের একটি জলদস্যু দল তাদের ট্রলারে হামলা চালায়। এ সময় জলদস্যুদের মারধর সহ্য করতে না পেরে জেলে মোঃ নাছির, মোঃ আজগর, সালাউদ্দিন, সোহেল, ফজল করিম সাগরে ঝাঁপ দেয়। অন্যান্য জেলেদের মারধর করে বরফ ষ্টোরে ডুকিয়ে রাখে। জলদস্যুরা মাছ, ডিজেল, জাল, মেশিনের যন্ত্রাংশসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
সূত্রে আরো জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে সাগরে নির্বিচারে ডাকাতি হচ্ছে। পুলিশের গতিবিধি লক্ষ্য করে জলদস্যুরা সক্রিয় হয়ে আবারো সাগরে ডাকাতি কাজে নেমে পড়েছে। কুতুবদিয়া মহেশখালী উপক‚লের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী, জলদস্যুদের র্যাব ও পুলিশ আত্মসর্মপন করার জন্য সুযোগ দিলে সে সময়ে দফায় দফায় দুই শতাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসী, জলদস্যু অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করে। তন্মধ্যে কুতুবদিয়া দ্বীপের জনৈক এক র্শীষ জলদস্যু সর্দ্দার নিজের গায়ের জোরে পুলিশ ও র্যাবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। ইদানিং ঐ শীর্ষ জলদস্যু সর্দ্দার কুতুবদিয়া উপক‚লে ঢুকে কিছু সংখ্যক জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগ করার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। পুলিশ ও র্যাব বাহিনীকে এ সব জলদস্যুদের নজরদারি আওতায় আনার অনুরোধ করেন জেলেরা।
জেলেরা আরো জানান নিয়মিত মাশোহারা দিতে অপারগ হলে এই ট্রলার সাগরে আর মাছ ধরতে যেতে পারেনা। তাদের অবাদ্য হওয়া কোন ফিশিং ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে গেলে ট্রলারের ইঞ্জিন, জাল, মাছ, তেল, বরফ, ব্যাটারি, চার্জার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি লুট করে নিয়ে যায়। মাঝে মধ্যে খালি ট্রলারটি ফুটো করে সাগরে ডুবিয়ে দেয়।
চট্টগ্রাম ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি নুর হোসেন বলেন সাগরে ইলিশ ধরার মৌসুমেই ফিশিং ট্রলার গুলো বেশিরভাগ ডাকাতের কবলে পড়ে। তাদের অভিযোগ আনোয়ারা, বাঁশখালী ও কুতুবদিয়ার ৪টি প্রধান ডাকাত গ্রুপ সাগরে সক্রিয়। আবার এদের অনেকগুলো শাখা গ্রুপ আছে। এরা স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বাহিনী’ হিসেবে ও পরিচিত। এছাড়াও মহেষখালী, সোনাদিয়ার ডাকাত গ্রুপগুলোও বেশ সক্রিয়।
মহেষখালী উপজেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন সাগরে জলদস্যুতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলে পরিবার গুলো চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছে। জলদস্যুদের দাপট বন্ধে কোস্টগার্ডসহ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
কুতুবদিয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, বিগত এক দেড় বছর ধরে সাগরে ফিশিং ট্রলার ডাকাতি হয়নি। পুলিশ র্যাব যৌথ অভিযানে উপক‚লের তালিকাভূক্ত জলদস্যুদের আত্মসমর্পন, আটক, কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ায় নিরাপদ স্থানে চলে যায়। কিন্তুু ইদানিং পুলিশের নিস্ক্রিয়তা দেখে জলদস্যুরা এ সুযোগে দলবদ্ধ হয়ে আবার পূর্বের পেশায় ফিরে গিয়ে সাগরে ডাকাতি কাজে নেমে পড়েছে। উপক‚লে র্যাব, পুলিশ, সাগরে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীর টহল জোরদার করার জন্য আইন প্রযোগকারী বিভাগের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। বর্তমানে তাদের অনেকে মুক্তি পেয়ে আবারও সুসংগঠিত হচ্ছে। তারা মহেষখালী, বাঁশখালী, পেকুয়া, আনোয়ারা, হাতিয়া, রায়পুর, লক্ষীপুর ও ভোলা উপকুলের তালিকাভুক্ত জলদস্যুদের সঙ্গে হাত মিলেয়ে দলবদ্ধ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্ষদ্র মৎসজীবি জেলে সমিতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি কৃঞ্চ জলধর জানান সাগরে যে ভাবে জলদস্যুদের তৎপরতা বেড়ে গেছে তাতে মনে হয় কোন জেলেরাই নিরাপদ নেই। সাগরে প্রতিনিয়ত ডাকাতি হলেও থানাগুলো ডাকাতি মামলা নিতে চাননা।
এ ব্যাপারে কুতুবদিয়া থানার ওসি শফিকুল আলম চৌধুরী জানান কুতুবদিয়া উপকুলের তালিকাভুক্ত অর্ধশত জলদস্যুকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে অন্য উপকুলের জলদস্যুরা জড়ো হয়ে ভিন্ন ভিন্ন এলকায় অবস্থান নিয়ে ডাকাতি করছে। এ ব্যাপারে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন।
সদরঘাট উপকুলীয় নৌ পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান জানান বঙ্গোপসাগর লাগোয়া যে সমস্ত নদী গুলো রয়েছে সেগুলো দেখবালে দায়িত্ব আমাদের। নিষেধাজ্ঞা সময়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখা, মৌসুমের সময় মাছ ধরা জেলেদের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের কাজ। আর সাগরে যে সব জেলে মাছ ধরবে তাদের নিরাপত্তা দেবে নৌবাহিনী ও কোস্টগাড়। এছাড়াও নদী পথে চুরি, ডাকাতি , চোরাচালান, মাদক পাচার সহ যে কোন অপরাধ মোকাবেলায় নৌ পুলিশ তৎপর রয়েছে। বিশেষ করে কর্ণফুলী সাঙ্গু, হালদাসহ একাধিক নদীতে পথে নৌ-পুলিশের টহল জোরদার রয়েছে।
ভয়েস/জেইউ।